কনসার্ট ফর বাংলাদেশ ১

দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ – বাংলাদেশের জন্য কনসার্ট

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন শরণার্থীদের সাহায্যার্থে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ ও ত্রাণ তহবিল সংগ্রহের প্রচেষ্টায়   নিউইয়র্ক সিটির ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে ১ আগস্ট ১৯৭১ সালের রবিবার অনুষ্ঠিত হয়েছিল দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ । প্রায় ৪০ হাজার দর্শক উপভোগ করেন এ কনসার্ট । প্রচারণার আংশ হিসেবে ২৭ জুলাই হ্যারিসনের বাংলাদেশ গানটি মুক্তির মধ্য দিয়ে কনসার্টটি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে । ১ আগস্ট দুপুর ২:৩০ মিনিট ও সন্ধ্যা ৮ টায় দুটো কনসার্টের আয়োজন করা হয় ।     

কনসার্ট ফর বাংলাদেশ ২

প্রথম কনসার্টের সব টিকিট কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিক্রি হয়ে যাওয়ায় উদ্যোক্তারা দ্বিতীয় কনসার্টটির আয়োজন করেন । বাংলাদেশ গানটি দিয়ে শেষ হয় প্রথম কনসার্ট ।

সত্তরের দশকে রক সঙ্গীতের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কনসার্ট ফর বাংলাদেশ । কোন দেশের যুদ্ধকে কেন্দ্র করে শরণার্থীদের সাহায্যার্থে বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত প্রথম দাতব্য লাইভ কনসার্ট এটি , যেখানে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও রক একই মঞ্চে পরিবেশিত হয় ।

কনসার্ট ফর বাংলাদেশ ৪

বংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্থানি বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যার ফলে প্রায় এক কোটি শরণার্থী পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে আশ্রয় নেয় । এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর ভরণপোষণ করতে ত্রাণসামগ্রীর অভাব দেখা দেয় । এই সংকট মোকাবেলায় এগিয়ে আসেন পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত বাঙ্গালী সেতার বাদক পণ্ডিত রবি শঙ্কর , তাঁর পৈত্রিক নিবাস ছিল এদেশে । তিনি তাঁর বন্ধু জর্জ হ্যারিসনের সহায়তায় আমেরিকায় একটি দাতব্য সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেন । মাত্র পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে কনসার্টের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন তারা      

কনসার্ট ফর বাংলাদেশ ৩

জর্জ হ্যারিসন তাঁর দলের সকল সদস্যকে ম্যডিসন স্কোয়ার গার্ডেনের কনসার্টে যোগদানের আমন্ত্রণ জানান । তাঁর প্রাক্তন ব্যান্ড দল দ্য বিটলসের সদস্যদেরও তিনি কনসার্টে যোগ দিতে বলেন । কিন্তু ম্যাকার্টনি দলের সাথে সম্পর্ক না থাকায় সরাসরি অস্বীকৃতি জানান । জন লেনন অংশগ্রহণে রাজি থাকলেও সেসময় স্ত্রী ইয়োকো ওনোর সাথে সন্তানের ব্যপারে আইনি লড়াইয়ে ব্যস্ত থাকায় শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণ করতে পারেন নি । মিক জ্যাগার ছিলেন তখন দক্ষিণ ফ্রান্সে , ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় তিনিও কনসার্টে আসতে পারেন নি । বিটলস থেকে কেবলমাত্র রিঙ্গো স্টারই কনসার্টে যোগ দিতে সক্ষম হন ।  

বিটলস ভেঙ্গে যাওয়ার পর এটিই ছিল হ্যারিসনের সরাসরি অংশগ্রহণ করা প্রথম লাইভ কনসার্ট । এরিক ক্ল্যপটন এ কনসার্টের মধ্য দিয়ে প্রায় পাঁচ মাস পর সরাসরি গান করেন । বব ডিলানও ১৯৬৯ সালের পর প্রথমবার দর্শকদের সামনে আসেন । কনসার্টের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন তিনি । বব ডিলান সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার পান ২০১৬ সালে ।  

রবি শঙ্কর ও ওস্তাদ আলি আকবর খান যন্ত্রসঙ্গীতের মধ্য দিয়ে কনসার্ট শুরু করেন । তবলায় ছিলেন ওস্তাদ আল্লা রাখা খান । তাঁরা বংলা ধুন নামে একটি ধুন পরিবেশন করেন ।

কনসার্ট ফর বাংলাদেশ ৬

কনসার্টটি লাইভ রেকর্ড করা হয়েছিল যা ভিডিও ও অডিও অ্যালবাম আকারে পরবর্তীতে প্রকাশিত হয় । ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর অডিও অ্যালবামটি তিনটি গ্রামোফোন রেকর্ডের একটি বক্স আকারে রিলিজ হয় । ডকুমেন্টারি সহ ভিডিও অ্যালবামটি প্রকাশ পায় ১৯৭২ সালে ।

কনসার্ট থেকে প্রায় ২৪৩,৪১৮.৫০ ইউএস ডলার সংগৃহীত হয় , যা ইউনিসেফের তত্ত্বাবধানে শরণার্থীদের সাহায্যার্থে ব্যয় করা হয় । এলবাম হতে প্রাপ্ত অর্থও ইউনিসেফের ফান্ডে জমা করা হয় । ইউনিসেফের হ্যারিসন ফান্ডে জমা হওয়া এ অর্থ থেকে স্বাধীনতার পরও বেশ কয়েক বছর বাংলাদেশে সাহায্যে পাঠানো হয় । পরবর্তীতে এ ফান্ড থেকে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিশুদের সহায়তা প্রদান করা হয়েছে যা এখনো অব্যাহত রয়েছে ।

কনসার্ট ফর বাংলাদেশ ৭

বিশ্ব জনমত গঠনের ক্ষেত্রে ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল কনসার্ট ফর বাংলাদেশ । পণ্ডিত রবি শঙ্কর কনসার্ট সম্পর্কে বলেন ,” এক দিনেই সকলে বাংলাদেশের নাম জেনে যায় । এটা ছিল অলৌকিক ।“

কনসার্ট ফর বাংলাদেশ অ্যালবামটি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয় ১৯৭৩ সালে । ১৯৯২ সালে অ্যালবামটি দুটি সিডি আকারে প্রকাশ করা হয় । মৃত্যুর আগে হ্যারিসন ২০০১ সালে অ্যালবামটি পুনরায় প্রকাশের জন্য কাজ করেছিলেন , কিন্তু কাজ শেষ করে যেতে পারেন নি । ২০০৫ সালের অক্টোবরে ডকুমেন্টারি সহ অ্যালবামটি ডিভিডি আকারে প্রকাশিত হয় ।  

অংশগ্রহণকারী

রবি শঙ্কর – সেতার

জর্জ হ্যারিসন – ভোকাল , গীটার

আলি আকবর খান – সরোদ

আল্লা রাখা – তবলা

কমলা চক্রবর্তী – তানপুরা

রিঙ্গো স্টার – ভোকাল , ড্রামস , তাম্বুরা

লিওন রাসেল – ভোকাল , পিয়ানো , বেস গীটার

বিলি প্রিস্টন – ভোকাল , অর্গান

এরিক ক্ল্যাপটন – লীড গিটার

বব ডিলান – ভোকাল , গীটার , হারমোনিকা ।

ক্লস ভোরম্যান – বেস গীটার ।

জিম কেল্টনার – ড্রামস ।

ব্যাড ফিঙ্গার – রিদম গীটারস , কোরাস ।

জেসি এড ডেভিস – লীড গীটার ।

ডন প্রিস্টন – লীড গীটার , ভোকাল ।

কার্ল র‍্যডলি – বেস গীটার ।

পিটি হাম , টম ইভান্স , জোয়ি মোলান্ড , মাইক গিবসন ।

দ্য হলিউড হর্নস – জিম হর্ন , এলান বিউটলার , চাক ফিন্ডলে , জ্যাকি কেলসো । লু ম্যাক্ক্রেরি , ওলি মিচেল ।

নেপথ্য কণ্ঠ – ডন নিক্স , জো গ্রিন , জেনি গ্রিন , মার্লিন গ্রিন , ডলরেস হল , ক্লডিয়া লিনিয়ার ।

কনসার্টে পরিবেশিত গান

wah – wah

Something

That’s the way god planned it 

It dont come easy

Beware of darkness

While my guitar gently weeps

Jumpin jack flash

Young blood

Here comes the sun

A hard rain’s a-gonna fall

Blowin in the wind

It takes a lot to laugh , it takes a train to cry

Just like a woman

My sweet lord

Bangladesh

বিকেলে পরিবেশিত গান ( পূর্বের গানসহ )

Awaiting on you all

Love minus zero / no limit

Hear me load

সন্ধ্যায় পরিবেশিত অতিরিক্ত একটি গান

Mr. Tambourine man

tor-e-tokka.com# h/@.

ছবিঃ সংগ্রহ , তথ্য – উইকিপিডিয়া

আরও খবর