পবিত্র আশুরা

মুহররম মাসের ফজিলত

মুহররম হিজরি বছরের প্রথম মাস। এ মাসে আল্লাহ তাআলার নিকট প্রতিটি মুসলমানের একমাত্র চাওয়া-পাওয়া হলো তিনি যেন মুসলিম উম্মাহকে বছরজুড়ে রহমত, বরকত ও কল্যাণ দ্বারা ঢেকে দেন। মুহররম মাস মহান আল্লাহ তাআলার নিকট অনেক সম্মানিত ও মর্যাদার একটি মাস। মুহররম মাসের পরবর্তি মাসের নাম সফর।

কুরআনে সূরা তওবার ৩৬ নং আয়াতে বর্ণিত যে চারটি মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার মধ্যে মুহররম অন্যতম। ইসলামের নবী মুহাম্মাদ এ মাসকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, রমজানের পরে সর্বোত্তম সাওম হলো মুহররম মাসের সাওম এবং ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল তাহাজ্জুদের সালাত ।

হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী মুহররমের ফজিলত তুলে ধরা হলো। আশুরার রোজা সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় এসে দেখলেন ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমরা তো তাদের অপেক্ষা হজরত মূসা আলাইহিস সালাম এর অনুসরণের অধিক যোগ্য। এরপর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এদিনে রোজা রাখলেন এবং অন্যদের ও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। -(বোখারি শরিফ)

অন্য এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহররমের ১০ তারিখের রোজার সঙ্গে ৯ অথবা ১১ তারিখে মিলিয়ে রোজা রাখতে বলেছেন। একদিন রোজা রাখা মাকরুহ। ফাতাওয়ায়ে শামী, ৩য় খণ্ড।

আশুরার ফজিলত সম্পর্কে ইমাম বায়হাকী রহ. তাঁর শোআবুল ঈমান গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি খালেছ মনে উদার হস্তে আশুরার দিন দান-খয়রাত করবে, আল্লাহ পাক সারা বছর তার রুজি-রোজগারে বরকত দান করেন।

হজরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশুরার দিন এবং রমজান মাসে যেভাবে তার সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি, অন্য কোনো সময় দেখিনি। (বুখারি, মুসলিম)

নবী করিম সা. ইরশাদ করেন, রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তবে মুহররম মাসে রোজা রাখ। কারণ এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহতায়ালা একটি জাতির তাওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তাওবা কবুল করবেন। (জামে তিরমিজি ১/১৫৭)।

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় এসেছে, এ কারণে মুহররম মাসের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে রসুসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রমজানের রোজার পর মুহররম মাসের রোজার ফজিলতই সবচেয়ে বেশি। (মুসলিম)।

মুহররমের রোজা পালনে যাতে ইয়াহুদিদের অনুসরণ ও অনুকরণ করা না হয়, সে ব্যাপারে তিনি স্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং এ বিষয়ে ইয়াহুদিদের থেকে ভিন্ন নিয়ম পালন কর। তোমরা মুহররম মাসের ১০ তারিখ রোজা রাখার পাশাপাশি আগে বা পরে একদিন রোজা রাখ। (মুসনাদে আহমাদ)। কেননা ইয়াহুদিরা শুধুমাত্র একদিনই (১০ মহররম) রোজা পালন করত।

আশুরার রোজার বরকতে আল্লাহ তাআলা বান্দার এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেন। বিশ্বনবি বলেছেন, আমি আল্লাহর কাছে আশা করি যে, আশুরার রোজার ফলে আগের এক বছরের গোনাহর কাফ্ফারা হয়ে যাবে। (মুসলিম)

উপরোল্লিখিত ঘটনা ও হাদিসগুলো পড়লেই বোঝা যায় এ মাস কত গুরুত্বপূর্ণ। আশুরার দিন কত ফজিলত ও বরকতময়, একই সঙ্গে এ মাসের তিনটি রোজার (৯.১০.১১ তারিখে) মধ্যে আল্লাহ কত ফজিলত রেখেছেন।

মুহররম হিজরি বর্ষের প্রথম মাস। নানা কারণে মাসটি অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। এমাসের ১০ তারিখ হলো পবিত্র আশুরা। এ দিনের সঙ্গে আছে পৃথিবী সূচনালঘ্নের বহু ইতিহাস ও ঘটনাবলি।

যে কারণে মুহররমকে আরবি মাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস ধরা হয়। এ মাসে গুরুত্বপূর্ণ যেসব ঘটনা ঘটেছেঃ

১. এ মাসে আশুরার দিন তথা ১০ তারিখে হজরত আদম (আ:) এর তওবা কবুল হয়েছে। বর্ণিত আছে, তিনি দীর্ঘ ৩ শত বছর কান্নার পর আশুরার দিনে তার তওবা কবুল হয়। এ দিনে হজরত আদম (আ.) বেহেশত থেকে দুনিয়ায় নেমে আসেন এবং এ দিনেই তিনি হাওয়া (আ.)-এর সাথে আরাফাতের  ময়দানে সাক্ষাৎ করেন।

২. হজরত নূহ (আ:) এর জাহাজ মহাপ্লাবন থেকে মুক্তি পায়। প্লাবন শেষে জাহাজটি জুদি পাহাড়ে (বর্তমানে আরাফাত পর্বতশ্রেণি) এসে স্থির হয়।

৩. এ দিনে হজরত মূসা (আ:) ও বনি ইসরাইল ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্ত হন এবং ফেরাউন ও তার অনুচরবর্গ লোহিত সাগরে নিমজ্জিত হয়।

৪. এ দিনে হজরত ইউনুস (আঃ) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান।

৫. এ দিনে হজরত ঈসা (আঃ) জন্মগ্রহণ করেন এবং এ দিনেই তাকে আকাশে উঠিয়ে নেওয়া হয়।

৬. আশুরার দিন পূর্ববর্তী আম্বিয়ায়ে কেরাম (আঃ) ও রোজা রাখতেন।

৭. রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে উম্মতে মুহাম্মদির ওপর আশুরার রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোজা নফল রোজায় পরিণত হয়।

৮. আরশ, কুরসী, আসমান-জমিন, চন্দ্রসূর্য, তারকা, বেহেশত এ দিনেই সৃষ্টি করা হয়েছে।

৯. এ দিনেই সর্বপ্রথম আসমান থেকে যমিনে বৃষ্টিপাত হয়েছিল।

১০. হযরত ঈসা (আ:) এ দিনেই পৃথিবীতে এসেছিলেন। এ দিনেই তাকে আসমানে তুলে নেয়া হয়েছিল।

১১. হযরত ইবরাহিম (আ:) এ দিনেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। নমরুদের অগ্নিকুন্ড থেকে তিনি এ দিনেই মুক্তিলাভ করেছিলেন।

১২. এই দিনেই হযরত সোলাইমান আলাইহিস সালাম কে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন বাদশাহী দেওয়া হয়েছিল।

১৩. এই দিনেই হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম তাঁর চোখের দৃষ্টি ফিরে পেয়েছিলেন।

১৪. এ দিনেই হযরত রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র, বেহেশতি যুবকদের সরদার হযরত ইমাম হোসেইন রা. শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করেন।

১৫. এই দিনে মহান আল্লাহ তা’আলা দুনিয়া সৃষ্টি করেন এবং এই দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।

tor-e-tokka.com# h/@

hasneaimun

ছবিঃ সংগ্রহ

আরও খবর