জিন্স

ফ্যাশনের আরেক নাম ট্রেডিশনাল জিন্স

জিন্স একটি ফ্যাশন ট্রেন্ড । ফ্যাশন দুনিয়ায় জিন্সের আধিপত্যও লক্ষ্যণীয় । যুগের পরিবর্তনের সাথে ফ্যাশন জগত যেমন পরিবর্তিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত । ঠিক তেমনি ভাবে পোশাক- পরিচ্ছদ,রুচিবোধেও ঘটছে তারতম্য । বিশ্বজুড়ে সকল বয়সী , বিশেষ করে কিশোর ও তরুণদের কাছে পছন্দের পোশাক জিন্স । উৎপত্তির পর থেকে অদ্যবধি জিন্সের চাহিদা কমেনি বরং বেড়েই চলেছে । ব্যবহার ও ভৌগলিক অবস্থানের ভিত্তিতে জিন্সের কাট – ছাটেও এসেছে পরিবর্তন । ফ্যাশনপ্রেমী তরুণ –তরুণীদের কাছে জিন্সের জনপ্রিয়তা বরাবরই তুঙ্গেই থেকেছে।

আধুনিক জিন্সের সূত্রপাত করেন বাভারিয়ান অভিবাসী লেভি স্ট্রস । ১৮৫১ সনে তিনি জার্মানি থেকে নিউইয়র্কে পাড়ি জমান । সেখানে তিনি কাপড় সহ বিভিন্ন শুকনো মালামাল সরবরাহ করতেন । ১৮৫৩ সনে গোল্ড রাশের সময় তিনি সানফ্রান্সিসকো যান । জেকব ডেভিস , যিনি পেশায় ছিলেন একজন দর্জি , ১৮৭২ সনে লেভি স্ট্রসের তার সাথে পরিচয় ঘটে । তিনি নিয়মিত লেভির কাছ থেকে কাপড় সংগ্রহ করতেন । এভাবে পরিচয় সূত্রে জেকবই লেভিকে যৌথব্যবসার কথা বলেন । প্রথমে তারা প্যান্ট তৈরির কথাই ভাবেন । । মোটা কটন কাপড়ের প্যান্ট , যা হবে দীর্ঘস্থায়ী । কেননা , সেখানকার খনি শ্রমিকদের জ ন্য শক্ত ও মোটা কাপড়ের প্যান্টের খুবই প্রয়োজন ছিল ।

ফ্যাশন ট্রেন্ড জিন্সের উদ্ভবই হয়েছিল খনি শ্রমিকদের জন্য, লেভি- ডেভিসের যৌথ উদ্যোগে । মোটা কটন কাপড় থেকেই তৈরি হতো জিন্স । এই কটন কাপড়কে জার্মান ভাষায় বলা হতো জিনিয়া ,যা বর্তমানে জিন্স হিসেবেই পরিচিত । জিন্স প্যান্টের বাটন হুক ,ব্যাক পকেট ডিজাইন করেছিলেন লেভি নিজেই । দুজনে মিলেই কিনেছিলেন জিন্স প্যান্ট ব্যবসার প্যাটেন্ট । প্যান্টের পেছনে লেভেলে লাগান লেভি স্ট্রস এন্ড কোঃ ।

বাণিজ্যিক ভাবে জিন্সের দেখা মেলে ক্যালিফোর্নিয়ার গোল্ড রাশ পরবর্তী সময়ে । সেসময় খনি শ্রমিকদের জন্য তৈরি হলেও আস্তে আস্তে এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে থাকে সর্বত্র। পোলো খেলোয়াড়রাও প্যান্ট নিয়ে ছিলেন শঙ্কিত । খেলার সময় প্রায়ই তাদের প্যান্ট ফেসে যেত । টেকসই ,মজবুত হওয়ার কারনে তখন জিন্সই ছিল বেশ জনপ্রিয় । এভাবেই আস্তে আস্তে জিন্স বিশ্বব্যাপি ব্যাপক প্রসার লাভ করে ।

রুচি ও চাহিদার প্রেক্ষিতে জিন্সের রয়েছে রকম ভেদ । ১৯৫০সনের শুরুর দিকে বিপ্লবী তরুণ , অভিনেতা কিংবা পপতারকারা পরিধেয় পোশাক হিসেবে বেছে নিয়েছিল জিন্সকে । সেসময়কার তরুণরা পোশাক- পরিচ্ছদে তারকাদের অনুসরণ করত । ঠিক এভাবেই ব্যাড বয় জিন্সের আবির্ভাব এবং জিন্স সাধারণ মানুষের মাঝে পরিচিতি পেতে থাকে । বিভিন্ন সিনেমায় জিন্সের ব্যবহার এবং অনুকরণ স্পৃহার কারনে জিন্সের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে থাকে । অথচ এর আগ পর্যন্ত জিন্স ছিল শুধুমাত্র শ্রমিকদের পরিধেয় পোশাক । হালকা ওয়াশ করা , কিছুটা রঙচটা , কালো বা ধূসর বর্ণের এই প্যান্টগুলোর নির্মাতা লেভিস, লী এবং র‍্যাংলার কোম্পানী । তখনও অবশ্য তরুণীরা জিন্স পরা শুরু করে নি ।

নিজেদের মুক্ত চিন্তাধারাকে প্রকাশ করতে , সৃজনশীলতা ও ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরতে হিপ্পি জিন্সের প্রচলন শুরু হয়েছিল ১৯৬০ সনের পর থেকে । প্রথম এমব্রয়ডারি নকশা দেখতে পাওয়া যায় হিপ্পি জিন্সে । এই জিন্স আনেকটাই উজ্জ্বল বর্ণের , তবে স্টোন ওয়াশিং ইফেক্ট , রাইনোস্টোন ও প্যাচ পকেটের ব্যবহারও হতো হিপ্পি জিন্সে ।‘ বেল বটম ফ্লেয়ারস’ ও’ লো রাইস হিপ হাগারস’ ছিল হিপ্পি জিন্সের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ।

নব্বই দশকের পর জিন্স ফ্যাশনে আসতে থাকে আরো পরিবর্তন । এসময় জিন্স ফ্যাশনে রক সংগীতের প্রভাব লক্ষ্য করা যায় । জিন্সের আপাদমস্তক পোশাকের প্রচলন শুরু হয় এসময় থেকেই । তবে এই ব্যাগি জিন্স তরুণীদের মধ্যেই বেশী প্রচলিত ছিল । পরবর্তীতে ন্যারো শেপের স্কিনি জিন্সও বেশ জনপ্রিয়তা পায় ।অবশ্য স্কিনি জিন্সের প্রচলন দেখা যায় তরুণীদের মাঝেই। এ জিন্সে স্ট্রেচিং ইফেক্ট যুক্ত হয় এবং মূল ফেব্রিক্সে সুতার সাথে ইলাস্টিক সুতা বা লায়ক্রা ব্যবহার করা হয় ।

খনি শ্রমিকদের চাহিদার প্রেক্ষিতে জিন্সের উদ্ভব হলেও সময়ের বিবর্তনে জিন্স প্রবেশ করেছে সাধারণ মানুষের মাঝে , পরবর্তীতে অভিজাত মানুষের ফ্যাশনে । একসময় জিন্স মানে নীল রংকে বোঝানো হতো । ধাপে ধাপে জিন্সের এ পরিবর্তন ফ্যাশন জগতেও ব্যাপক প্রভাব ফেলে চলেছে।

ছবিঃ গুগল

আরও খবর